Thursday, January 9, 2014

নির্বোধ নিঠুর

নির্বোধ নিঠুর

রুমন আনাম

তরু ও তিথি প্রেম করে। ভালোবাসার ঢেউয়ে তারা একে অন্যের মাঝে হারিয়ে যায়। কিছুদিন পর তারা বিয়ের কথা ভাবে। তিথির পরিবারের লোকজন রাজি হয় না। শেষে তিথি পালিয়ে তরুকে বিয়ে করে। তারা নিজেদের মতো সংসার সাজাতে থাকে। কিন্তু, তিথির পরিবার কিছুতেই মেনে নেয় না। তরুর কাছ থেকে মেয়েকে আলাদা করতে তিথির মা শুরু করেন নানান অপকৌশল। তিথির ভালোবাসা পেয়ে সে সব সহ্য করে। এভাবে বছর গড়িয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মা তিথিকে বুঝাতে সক্ষম হয়, তরুকে তার ছেড়ে আসা দরকার। তিথি তার বাবা মায়ের কাছে ফেরত যায়। মেয়ের সাপোর্ট আদায় করার পর মা এবার তরুর কাছ থেকে তিথিকে দূরে সরানোর পথে আরও সক্রিয় হয়ে পথ হাঁটা শুরু করে। তিথির মা তরুর কাছে ডিভোর্স চায়। তরু তিথিকে অনেক ভালোবাসে। তাকে ছাড়া সে ভাবতে পারে না। সে কিছুতেই রাজি হয় না। তিথি বদলে যায়। সে এখন আর তরুকে ভালোবাসে না। তার মা অন্যকোনো নতুন স্বপ্ন তার ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেই স্বপ্নের আশাতে সেও মুক্তি চায়। তরু তবু রাজি হয় না। এবার তিথিও মায়ের অপকৌশলে সমর্থন দিয়ে তরুকে ছাড়ার জন্যে সব করতে রাজি। তিথি একদিন তরুকে দেখতে চায়। তরু সব ভুলে শাহবাগ থেকে একগুচ্ছ ফুল কিনে দেখা করতে যায়। তরু অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও তিথি "আসছি" বলেও আসে না। কিছু সময় পরে আসে পুলিশ। তরুকে থানায় নিয়ে যায়। তরুর হাতের ফুলগুলি দেখার সৌভাগ্য তিথির হয় না।


তিথির মা জানে তরু তার মেয়েকে ভালোবাসে। তিনি ভাবেন, মেয়েকে পাওয়ার জন্যে তরু পাগলামি করতে পারে। কিংবা, প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কোনও ক্ষতি করতে পারে। তাই তরুকে থানায় নিয়ে শায়েস্তা করতে চায়। ভালোবাসা দমনে তিনি পৃথিবীর এক নিষ্ঠুর মানবী হয়ে ওঠেন। তিথির মায়ের মনের কথাটা তরু বুঝতে পারে। এই নিচু ভাবনা বুঝতে পেরে নিমিষেই শক্ত হয়ে যায়। ঘৃণাও জন্মায়। সে ডিভোর্স দিতে রাজি হয়। মাথা উঁচু করে তিথির মাকে বলে, "আমি যদি আপনার মেয়ের ক্ষতি করে নিজেই মরে যাই, তাহলে কী করবেন? কাকে সাজা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিবেন?" তিথির মা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। এই প্রথম তিনি মাথা নিচু করে নিরুত্তর থাকেন। তরু আর কোনও কথা না বলে ডিভোর্স পেপারে সই করে।

তিথিকে হারিয়ে তরু মানুষের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। তার মানসিক ও শারীরিক অবস্থার অনেক ক্ষতি হয়। একসময় সে নিজেকে আবারো স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করে।

ছয়মাস পর তিথির এক বান্ধবীর ফোন-
-হ্যালো!
-হ্যালো!
-তরু ভাইয়া?
-হ্যাঁ।
-ভাইয়া তিথি তার ভুল বুঝতে পারছে। তুমি প্লিজ তিথিকে ভুল বোঝো না। তিথি...
-তিথি কে? আমি এই নামের কাউকে চিনি না।

কথা না বাড়িয়ে তরু ফোনটা রেখে দেয়।

...........................................................................
এটা এক বন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার গল্পরূপ।

No comments:

Post a Comment