Wednesday, March 6, 2013

মুক্তগণমাধ্যমে আমাদের দায়বদ্ধতা



প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সবার হাতেই গণমাধ্যম। অর্থাৎ কারো নিজস্ব চিন্তা চেতনা প্রকাশের জন্যে প্রচলিত গণমাধ্যমের কাছে এখন ঘ্যান ঘ্যান না করলেও চলে। আমরা চাইলে নিজেরাই নিজেদের চিন্তা গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। প্রযুক্তির অবদান আমাদেরকে পূর্বের থেকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে।

উন্মুক্ত গণমাধ্যম ব্যবহারে যেমন কল্যাণকর দিক আছে তেমনি আছে কিছু বিপর্যয়ের সম্ভবনা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কিসের বিপর্যয়? যে যার মতো লিখবে বা নিজের ভাবনা প্রকাশ করবে তাতে বিপর্যয়ের কি আছে? আছে।

ভাষার ব্যবহার

মুক্ত গণমাধ্যম বলতে আমি ইন্টারনেটের এই বিশাল মাধ্যমটি নিয়েই বলছি। এই মুক্তগনমাধ্যমে কেউ কারো কাছে দায়বদ্ধ না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজের মতামত প্রকাশে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। আর এই সুযোগে অসচেতনার অভাবে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ সবকিছু মিলে গিয়ে আদর্শ, ভাষা ও শিল্পের এক খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। কেউ যদি এই গণমাধ্যম সচেতনভাবে ব্যবহার না করে, তখনই বিপত্তি ঘটে। কেউ যখন তাঁর কথা বহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তখন ভাষার উপর দখল বাড়ানো সবথেকে বেশি জরুরী বলে মনে করি। লেখক শুদ্ধ বা অশুদ্ধ যে রকমের ভাষা ব্যবহার করে লিখুন না কেন, তা সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করলে পাঠক, শ্রোতা বা দর্শক সেটা যেমন শিখবে তেমনি অশুদ্ধ বা বিকৃত ভাষা ব্যবহার করলে সেটাও অন্যদের মধ্যে সংক্রমণের মতো ঢুকে যাবে। এতে আমাদের ভাষাগুলি তার নিজস্ব মর্যাদা ও সৌন্দর্য হারাবে। ইতোমধ্যেই ভাষার বিকৃতি বেশ প্রকট আকারে এই মুক্তগণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। ভাষার প্রতি এটি একটি অন্যায় আচরণ। আমরা কারো কারো লেখায় এমন কিছু বিকৃত বানান ও শব্দ দেখতে পাই যা মেনে নেওয়া যায় না। কেউ যখন "মন চায়" শব্দটিকে "মুঞ্চায়" লেখেন তখন ব্যক্তিগতভাবে আমি সেই লেখার দিকে তাকাতে পারি না। আমি ভাষার শুদ্ধতার পক্ষে। আমি অশুদ্ধ ভাষা পড়ে সংক্রমিত হতে চাই না।

ব্যক্তিগত আদর্শ ও আদর্শের দায়বদ্ধতা

এবার আদর্শের জায়গায় আসি। এই মুক্তগণমাধ্যম ব্যবহারকারী ব্যক্তি যে আদর্শের পক্ষেরই হোন না কেন, দেশমাতা ও মানবিক কল্যাণের পক্ষে থাকা জরুরী। এটা শুধু মুক্তগণমাধ্যম ব্যবহারকারী একজন লেখকের জন্যে প্রযোজ্য তা নয়, আমি মনে করি এই দায়বদ্ধতা সব লেখকের মধ্যেই থাকা প্রয়োজন। তা না হলে তিনি যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবেন তেমনি আমাদের সমাজ ও পৃথিবী এগিয়ে যাবার পথে বাঁধা পাবে।

নিজের খ্যাতির জন্যে ইন্টারনেটের এই মুক্তগনমাধ্যমে অনেকেই শুধুমাত্র ঠাট্টা তামাশার বিষয়ে লিখছেন। খ্যাতি তিনি হয়তো পাচ্ছেন, কিন্তু আমরা তাঁর কাছ থেকে উন্নয়নের অনেক কিছু পাবার সুযোগ থাকলেও সেই সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ঠাট্টা তামাশা একেবারেই কোনো বিষয় হতে পারে না; তা না, বরং এই ঠাট্টা তামাশার মধ্যেও যদি মানবিক উন্নয়নের জন্যে খোঁচা দেওয়ার মতো বিষয় থাকে কিংবা অনুপ্রেরণা থাকে তাহলে তা অবশ্যই ভালো কিছু।

সচেতনতা

ইন্টারনেটের এই মাধ্যমে যিনি লেখক, তিনিই প্রকাশক। ফলে একজন লেখকের দায়বদ্ধতা বেড়ে যায়। একটি লেখা লিখেই প্রকাশ না করে তা নিজে আবার যাচাই করে প্রকাশ করা দরকার। লেখার মধ্যে যে বিষয়গুলি আছে তা কোনোভাবে অমানবিক কিনা, কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর বিপক্ষের কিনা, ব্যক্তি উদ্দেশ্য সাধনের বিষয় কিনা, অবৈজ্ঞানিক কিনা, অমানবিক বিষয়কে উসকে দেয় কিনা, ভুল তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি রকমের বিষয়ে বিবেচনা করে লেখা প্রয়োজন। প্রয়োজনে তা সম্পাদনা করে তবেই প্রকাশ করা উচিত।

এরকম বহু বিষয়ের দিকে খেয়াল করে একজন লেখককে তাঁর লেখা ও ভাবনা প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করি। সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। মূল কথা এটাই।

No comments:

Post a Comment