Tuesday, November 5, 2013

চলো, জন্মের সাক্ষর রেখে ভালোবাসাময়ও মানবিক হই

আমাদের জীবনটা কেমন যেন প্রশ্নহীনভাবে গতানুগতিক। প্রশ্নহীন এই জন্যেই যে, আমরা কেন বাঁচি, কেন চলি, কি করি বা যা করি তা করা ঠিক কিনা এই নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে না। ফলে আমরা অধিকাংশরা প্রতিশ্রুতিহীন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। জীবনের স্রোত আমাদের যেদিকে বয়ে নিয়ে চলেছে, সেদিকেই যাচ্ছি। মাঝে মাঝে কিছুটা এদিক সেদিক করে জীবন পথের দিক পরিবর্তনের চেষ্টা করলেও বিস্তর পরিবর্তন ঘটিয়ে সার্থক ও মানবিক জীবনের দিকে ফিরে যাচ্ছি না। আমরা সবাই যেন আটপৌরে জীবনের মধ্যেই বন্দী। এই ধরণের জীবনকে আমরা সোজা ভাষায় বলি, খাওয়া, ঘুমানো, মল-মুত্র ত্যাগ করা, বাচ্চা জন্ম দেওয়া এবং শেষে মরে যাওয়ার জীবন।

সার্থক, মানবিক ও প্রতিশ্রুতিশীল জীবন হবে এর ভিন্ন। যেখানে মানুষ তার জন্মের সাক্ষর রেখে যাবে। শুধু নিজের জন্যেই সে বাঁচবে না, অন্যের জন্যেও বাঁচবে। নিজের জন্যে বাঁচার পাশাপাশি অন্যের কল্যাণে, অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে, অন্যের মুখের হাসি কেরে না নিতে কিংবা অন্যের বুকের ও শরীরের রক্ত না ঝরানোর পক্ষে কাজ করবে।

তাহলে, আমরা মানুষ হিশেবে শুধু কী অন্যের জন্যে ভাববো? শুধু অন্যের জন্যে ভাবতে হবে এমন নয়, আবার, নিজের জন্যে কিছু না ভেবে অন্যের জন্যে ভাবলেও মন্দ কী? আমি যখন তোমার জন্যে কাজ করবো, আমি যখন তোমার জন্যে ভাববো তুমিও তখন ভাববে আমার কথা, তুমিও তখন কাজ করবে আমার জন্যে। তোমার ভাল-মন্দ আরেকজন ভাবলে সেটা নিঃসন্দেহে ভালোবাসাময়। এতে এক মানুষ আরেক মানুষে মিলে একাকার হয়ে যাবে। ভালোবাসার বন্যায় ভেসে যাবে পৃথিবী। হৃদয়ে হৃদয় মিশে বিশাল ধরণী হয়ে পড়বে একটা সুখের সংসার। দুঃখ ও বেদনা আমাদের ছুঁতে পারবে না।

আমরা যদি সব কাজ অন্যের জন্যে নাও করতে পারি, কিছু কাজ অন্যের জন্যে করার দায় আমাদের আছে। নিজের মুখে হাসি ফুটানোর পাশাপাশি অন্যেজনের মুখের হাসি মলিন হলে তাকে হাসতে সহযোগিতা করার দায় আমাদের আছে। এটাও যদি না করি তবে, সে জীবন সার্থক জীবন নয়।

আমাদের সমাজে সবার ভাবনা শুধু নিজেকে নিয়ে। অন্যের দিকে তাকানোর মতো উদার সামাজিক চর্চা এখানে নগণ্য। তবে, শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে সে জীবন সার্থক জীবন না হলেও, দোষের নয়। এ জীবন আত্মকেন্দ্রিক জীবন। কিন্তু, শুধু নিজেকে নিয়ে ভেবে অন্যের মুখের হাসি কেড়ে নিলে সে জীবন নিঃসন্দেহে পাশবিক (পশুর) জীবন।

পাশবিক প্রাণ চাই না। মানবিক ও ভালোবাসাময় মানুষ চাই।

No comments:

Post a Comment