Thursday, January 29, 2015

এই কথাগুলো এলেবেলে

ফেসবুকে মানুষ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। অধিকাংশ মানুষই তার ভেতরের একান্ত মানুষটিকে এখানে মেলে ধরে। কাউকে জানতে চাইলে তার ফেসবুকের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখলে তাকে দারুণভাবে জানা যাবে। ফেসবুকের আঙিনায় একজন মানুষের মন ও মনের ভেতরটাকে যতোটা জানা যায় ততোটা হয়ত তার খুব কাছে থেকেও জানা যায় না। আমি নানান কারণেই ফেসবুকের অবদানকে খুব গুরুত্ব দেই। মানুষ তার মনের একান্ত অনুভূতিকে তুলে ধরার চমৎকার উপায় পেয়েছে; একারণেও আমি ফেসবুকের অবদানকে গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করতে চাই।


কিছু মানুষ আলাদা। এটা হয়, হতেই পারে। তারা ফেসবুকে এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে পছন্দ করলেও মনের কথা শেয়ার করতে পারে না। অনেকেই নিজের একান্ত আবেগ শেয়ার করেন না। হাজার কষ্ট পেলেও তাকে কেউ দুর্বল মনের বা আবেগি মানুষ বলে জানবে, এই শংকায় অনেকেই মনের একান্ত কথা শেয়ার করতে পারে না। আবার অনেকেই সামাজিক অবস্থানের কারণে ফেসবুকে কি লিখবে আর কি লিখবে না, তা তাকে হাজারবার ভেবে লিখতে হয়। এই ধরণের মানুষগুলি বেকায়দায় থাকে। তারপরেও একটু চোখ মেলে দেখলেই অধিকাংশ মানুষের মনের অবস্থা তার ফেসবুকের প্রোফাইল দেখে বুঝে নেওয়া যায়। একারণে বাস্তব জগতের মানুষের চেয়ে অনেকে ফেসবুককেই অনেক আপন ভাবে। সুখে-দুঃখে সে নিজেকে মেলে ধরতে পারে।

আমিও পারি না নিজের মনের সব আবেগ তুলে ধরতে। মাঝে মাঝে নিজেকে সম্পূর্ণ তুলে ধরতে ইচ্ছে করে; কিন্তু আবার থেমে যাই। মাঝে মাঝে ভাবি, খুব সিলি ধরণের হবো। কিছুদূর গিয়েই আবার শক্ত হয়ে থাকি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, আমি যা প্রকাশ করি তাতে আমার কঠিন ভাব টা-ই উঠে আসে। ভেতরের সরল মানুষটা চাপা পড়ে থাকে। তারপরেও অন্য সবার মতোই আমার ব্যক্তিত্বের ধরণ, মনের গঠন, চিন্তা-চেতনা কিংবা আমার রুচির অবয়ব ঠিকই এই ফেসবুক আঙিনায় ফুটে ওঠে।

আমি নিজেকে দিয়ে অন্যকে বুঝতে চাই। ফেসবুক আঙিনায় যেমন আমার মনের সরল রূপটা ফুটে ওঠে না, ঠিক তেমনি অধিকাংশ মানুষের মনের একান্ত সরল রূপটাও ফুটে ওঠে না।

মানুষের বাহিরটা-ই তার একমাত্র রূপ নয়। সব মানুষের ভেতরেই আরেকটা মানুষ বাস করে। ভেতরের মানুষটা বাহিরের মানুষ থেকে ভীষণ আলাদা। ভীষণ নরম আর আবেগি। বাহিরের মানুষটাকে যেমনই ভাবো না কেন, ভেতরের মানুষটি খুব আদর-ভালোবাসা কাতর। মায়া-মমতা আর ভালোবাসা পেলে সে মানুষটি নিতান্তই শিশুর মতো সরল। আদুরে বেড়ালের মতো অনুগত। কিন্তু ওই শিশুটিকে বের করে আনাটা সহজ নয়। খুব কম মানুষই অন্য মানুষের ভেতরের শিশুটিকে আবিষ্কার করতে পারে। প্রায় সব মানুষই চায়, তার শিশুর মতো মনটাকে কেউ আবিষ্কার করুক। সেই আবিষ্কারকের দাসত্ব মেনে নিতেও সে দ্বিধাবোধ করবে না।

No comments:

Post a Comment