Thursday, November 20, 2014

ঠেলা ও ঠেলাঠেলি

ঠেলা ও ঠেলাঠেলি

ধরাতলে যোগ্যতার চেয়ে ঠেলার শক্তি বেশি। ঠেলা মারতে পারলে অথবা কারো জন্যে অন্য কেউ ঠেলা দিলেও জায়গামতো চলে যাওয়া যায়। ঘরে বা বাইরে, মাথার ঘিলু বা সর্বোপরি যোগ্যতা অনুসারে যেখানে যার থাকার কথা, সেখানে সে নেই। ঠেলাঠেলি করলে, ঠিকই জায়গা বরাবর পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। সে জায়গায় তার মানাক বা না মানাক, তা মুখ্য বিষয় নয়।

এবারে ঠেলা তত্ত্ব নিয়ে ভাবা যাক। ঠেলাঠেলি দুই প্রকার। অবশ্য "ঠেলার নাম বাবাজি" বলে আরেক ঠেলা আছে। তবে সেই ঠেলা এই ঠেলা নয়। পূর্বে উল্লেখিত দুই প্রকার ঠেলাঠেলির মধ্যে প্রথম প্রকার হল, নিজের ঠেলা। আর দ্বিতীয় ঠেলা হল, নিজের হয়ে অন্য কেউ ঠেলে দেওয়া। এই দুই ঠেলাই যবরদস্ত কাজের।


ধরো কোনও এক মাঠে রিলিফের কম্বল দিচ্ছে। যে যাচ্ছে, সে-ই পাচ্ছে। তোমার দরকার নাই ওই কম্বল। তারপরেও তুমি একটা নিতে চাও। তাহলে চলে যাও এবং ঠেলা দাও। দেখবে গায়ে গতরের ঠেলা মেরে বা কথার ঠেলা মেরে তুমিও একটা কম্বলের মালিক হয়ে গেছ। কম্বলখানা গরিব, দুঃখী ও অসহায়ের বেশি দরকার। তাতে কী? তুমি ভিড় ঠেলে অর্জন করেছ। যে ভিড় ঠেলে যায় নি, সেটা তার ব্যাপার। মরগে অভাগা!

আবার ধরো, ওই মাঠের কম্বল বিতরণের কাজে তোমার মামা, খালু, চাচা বা দাদা চৌকিদারের দায়িত্ব পেয়েছে। তুমি হয়ত কিছুটা সুবোধ। ঠেলাঠেলি করে কম্বল নিতে পারছ না। কিন্তু মনে কম্বলের বাসনা কলকল করছে। চিন্তা কী বল? শুধু কানে কানে তোমার মামা, খালু, চাচা বা দাদাকে কম্বলের বাসনার কথা জানাও। ব্যাস! কাজ হয়ে গেছে। তিনি ভিড় ঠেলে, গরীব দুঃখীর লাইনে লাঠিচার্জ করে তোমাকে লাইনের সামনে দাঁড় করিয়ে দিবে। এবার হাত বাড়াও, একটা নাও এবং বুক ফোলা ফোলা করে চলে আসো। যে অভাগার কম্বলের দরকার, সে হয়তো পাবে না। পাবে কেন? তার ঠেলা মারার চৌকিদার থাকলে তো?

এভাবেই
যার ঠেলা যতো ভারি
সে পায় গাড়ি গাড়ি
ঠেলাঠেলি দেখে এবার
মেধা ঘুমায় বাড়ি।।

তারা নিজে ঠেলে নেয়
নয়তো অন্যে ঠেলে দেয়
ঠেলায় মেলে মেধায় নয়
আহা কি কারবারি।।

ঠেলা বড়োই কাজের ভাই
ঠেলে না-পাওয়াও পাই।।
ঠেলাঠেলি জানলে পরে মেধাটা অদরকারি।।

মেধাবীদের আরেক সমস্যা হলো, তেনারা ভদ্রলোক। ফলে তেনারা ঠেলাঠেলি করবেন না। যোগ্যতা দিয়ে কিছু পেলে পেলেন, না পেলে নাই। তবু  ঠেলাঠেলির মধ্যে নাই। এদিকে ঠেলাঠেলি করা লোকেরা ঠেলতে ঠেলতে হয়ে যাচ্ছে উজির, নাজির, রাজা, বাদশা, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক, নায়ক বা অনেক কিছু। এদের কারণে আসল মানুষ জায়গা পাচ্ছে না। আর কাজের জায়গায় ঠেলাঠেলি করা লোকটি থাকায় - কাজের কাজ হয় না। কাজ হয় অকাজের মতো। আসল জায়গায় নকল লোক থাকলে - তা তো হবেই।

ঠেলাঠেলি করে জায়গা নেওয়া লোকেরা যে কাজ করে তাও হয় ঠেলা মারা। ঠেলা মেরে কাজ করতে করতে তারা নিজেরাও ঠেলার সম্মুখিন হন। আর এই ঠেলা, "ঠেলার নাম বাবাজি"। মাইরি বলছি, এই ঠেলা দারুণ ধারালো। হবে না কেন? এই ঠেলা খানি কোনো না কোনো ঘিলুওয়ালার ঘিলু থেকে উৎপাদিত হয়।

-রুমন আনাম

No comments:

Post a Comment