Saturday, January 10, 2015

সুহৃদা

কিশোর বয়সের প্রেমের মতো তৃপ্তিদায়ক স্মৃতি আর কোনও সময়ের প্রেমে দেখিতে পাওয়া যায় না। ইহা আজীবন মনের অলিগলিতে চলাচল করিয়া আপনাকে আনমনা করিবে। আপনি মনে মনে ভাবিয়া যথেষ্ট তৃপ্তিও লইতে পারিবেন। এহেন স্মৃতি মুছিবার সাধ্য কাহারো নাই। আমিও কিশোর বয়সে এক সহপাঠীকে ভালোবাসিয়াছিলাম। তাহার কোমল কণ্ঠ, মৃদু পায়ে চলা এবং লাজুক অথচ দৃঢ় ভঙ্গিমায় নিজেকে উপস্থাপন করিবার সুনিপুণ দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করিয়া তুলিত। তাহাকে দেখিয়া মুগ্ধ হইতাম। মুগ্ধতা লইয়াই আমি তুষ্ট থাকিতাম। তাহাকে ভালোবাসিবার মতো দুঃসাহস করিতাম না। কারণ আমাদিগের মধ্যে এক সামাজিক দেয়াল পথ আটকাইয়া ছিল। নিজ হইতে সে দেয়াল উপেক্ষা করিয়া এবং একতরফা তাহাকে ভালবাসিবার মতো বেগতিক মনের অধিকারী আমি ছিলাম না। এইরূপেই আমার দিন কাটিয়া যাইতেছিল। ইহার মধ্যেই লক্ষ্য করিলাম, আমার মনোহারিণী তাহার কোমল চাহনি দিয়া আমাকে কি যেন কহিতে চাহিতেছে। ইহা দেখিয়া আমার প্রেমিক হিয়া উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। আকাশের চন্দ্র হাতে পাইবার মতো আনন্দ আমার মনে ভর করিল। দিনরাত্রি তাহাকে লইয়া ভাবিতে থাকিলাম। তাহাকে লইয়া ভাবিতে কতো যে সুখ, তাহা ভাষায় প্রকাশ করিবার মতো নহে। সুযোগ পাইলেই নিজেকে আড়াল করিয়া আপন মনে তাহাকে লইয়া ভাবিতাম। আহা! ভাবনার সেই ক্ষণগুলি বড়োই মধুর!

সে আমার প্রণয়িনী বলিয়া কথা। তাহার নাম ধরিয়া ডাকিব এহেন সৃষ্টিছাড়া কাজ আমি করিব কেন? তাহার সাথে মিলিবে এমন একখানা নাম বাহির করিলাম। "সুহৃদা"। ইহার অর্থ হইলো সুন্দর হৃদয়যুক্তা রমণী। এবার তাহাকে মনের কথা বলিবার পালা। কীভাবে বলিব? অনেক ভাবিয়া তাহাকে পত্র মারফত মনের কথা বলিবার জন্যে মনঃস্থির করিলাম। পত্র লিখিয়া তাহাকে দিবার মতো সুযোগ পাইতেছিলাম না। দুই-তিন দিন পর সুযোগ বুঝিয়া তাহাকে পত্রখানা দিলাম। পত্র দিবার পর হইতে মনের মধ্যে আরেক তাণ্ডব চলিতে লাগিল। দিনের পর দিন অপেক্ষা করিয়াও পত্রের কোন উত্তর পাইলাম না। নিজ হইতে আবার যোগাযোগ করিব, এমন হতচ্ছাড়া আমি হইতে পারি নাই। তবে লোকমারফত তাহার মনের কথা জানিবার চেষ্টা করিয়াও কোনরূপ সুফল পাই নাই। অতঃপর ধীরে ধীরে আমার কিশোর প্রেম মরিয়া যায়।
অনেক আগে তাহার বিবাহ হইয়াছে। মাঝে মধ্যে হঠাৎ করিয়া তাহাকে দেখিতে পাই। তাহাকে দেখিলে অভিমানী হইয়া উঠি। দেখিয়াও না দেখিবার ভান করিয়া তাহার পাশ দিয়া চলিয়া যাই। আচরণে বুঝাইয়া দেই, তাহাকে আমি তুচ্ছ জ্ঞান করিতেছি। তবে মনে মনে চাই সে আমাকে আরও আরও দেখিবে, আমিও তাহাকে না দেখিবার ভান করিয়া একটুখানি দেখিব। এখন তাহার নয়নে দেখি সেই কিশোর বয়সের আকর্ষণ করা চাহনি আর তাহাতে যুক্ত রহিয়াছে কিছু অনুতাপ। কখনো কখনো তাহাকে বুঝিবার ইচ্ছা জাগে। বুঝিতে গেলে আসলেই কি তাহাকে বুঝিতে পারিব? আসলেই কি তাহাদের বোঝা যাইবে?

No comments:

Post a Comment