Monday, October 6, 2014

গরুর ভাগ্য বৃত্তান্ত

গরুর ভাগ্য বৃত্তান্ত

মানুষ হইয়া জন্ম নিতে না পারায় পশু-পাখীদের মনে দুঃখ থাকিতে পারে। ইহা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুই হাজার চৌদ্দ সালে আসিয়া বলিতে হইবে গরু জাতির গরু হিশাবে জন্ম লওয়া সার্থক হইয়াছে। এ বছর গরুসকল পৃথিবীর ইতিহাসে মানব মানবীদের নিকট হইতে রেকর্ড পরিমাণ আদর ভালোবাসা পাইয়াছে। ইহা অবিস্মরণীয়। ইহা গরুদের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়া রাখা উচিত। গরু জাতি এবার মরিয়াও শান্তি পাইবে।


শুধু কি আদর-ভালোবাসা? না! এবার ইহারা অনেক কিছু পাইয়াছে। এই চৌদ্দ সালে একেকটা গরুর অন্তত একশ খানা করিয়া ফটো উঠিয়াছে। গরুর টাকা নাই, পয়সাও নাই। ইচ্ছা থাকিলেও ইহারা স্টুডিওতে গিয়া অথবা ফটোগ্রাফার ভাড়া করিয়া ছবি উঠাইতে পারিত না। ফেসবুকে আপলোড করা তো দূরের কথা। ইহাদের হাত নাই। আছে শুধু চারখানা ঠ্যাং। ঠ্যাং দিয়ে তো আর ফেসবুক চালানো যায় না। এহেন বিষয় লইয়া তাহাদের মনে দুঃখ-বেদনা থাকিলেও এতদিন করার কিছুই ছিল বলিয়া মনে হয় না।

যাইহোক, এবার মানব-মানবীর অনুগ্রহে গরুদের শখের ষোলকলা পূর্ণ হইলো। ইহা মুখের কথা নহে? এই সৌভাগ্য কোন ঘোড়া, মুরগী, ব্যাঙ বা বোয়াল মাছেরও হয় নাই। আপনি যদি ভাবিয়া থাকেন তাহাদের শুধু একক ছবি তোলা হইয়াছে তাহা হইলে ভুল করিবেন। এবার গরুর সাথে ছবি তুলিয়াছে সকল বয়সের মানব মানবী। গরুর সাথে ছবি তোলার এই কায়দার একটা জবরদস্ত নামও দেওয়া হইয়াছে। ইহার নাম কাউফি। ইহার অর্থ হইলো গরুর মস্তকের সহিত মানব মানবীর মস্তক লাগাইয়া ছবি তোলা। আহ কী ভালোবাসা! বুজ জুড়িয়া যায় দেখিয়া!

নতুন এই পদ্ধতি চালু থাকিলে গরুর কপাল চিরদিনের জন্যে খুলিয়া গেছে বলিতে হইবে। কারণ, এখন পর্যন্ত অন্য কোন প্রাণীর সাথে ছবি তোলার পদ্ধতি ও তাঁর নাম আবিস্কার হয় নাই। মানব মানবীর কাজ কর্মের কোন আগামাথা কখনো কখনো থাকে না। কোন অকামও চালু হয়ে গেলে সেটাও যুগের পর যুগ চলিতে থাকে। তাই ধরিয়া নেন, গরুর সাথে এই ছবি তোলার কর্মও থামিবে না। বরং বাড়িবে।

লিখিতে বসিয়া শেষ করিতে পারিতেছি না। টিভিতে তাহাদের দেখানো থেকে শুরু করিয়া রঙিলা তরুণী কিংবা মডেলদের ছোঁয়া পাওয়ার মতো মহান ভাগ্যও গরুগণের কপালে জুটিয়াছে।

অ্যানিওয়ে, মানব জাতির মধ্যে যারা অসহায়, অনাথ, হতদরিদ্র তাহাদেরকেও এভাবে আদর ভালোবাসা দেওয়ার একটা হুজুগ কি তোলা যায়?

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা!

No comments:

Post a Comment